শ্রীশ্রীজগদ্ধাত্রী পূজা

 শ্রীশ্রীজগদ্ধাত্রী পূজা

পূজয়েজ্জগতাং ধাত্রীং কার্তিকে শুক্লপক্ষকে।

দিনোদয়ে চ মধ্যাহ্নে তথা সায়াহ্নকেঽহনি।। 

কার্তিকমাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে দেবী জগদ্ধাত্রীর পূজার বিধান শাস্ত্রে দৃষ্ট হয়। যেদিন নবমী  তিথি উদিত সূর্যকে স্পর্শ করবে, সেদিনই ত্রিসন্ধ্যায় অর্থাৎ, প্রাত, মধ্যাহ্ন ও সায়ং সন্ধ্যায় দেবীর তিন বার পূজা হবে। যেহেতু এটি তান্ত্রিকী আচার, তাই উক্ত দিনেই ঘট উদ্বাসনের রীতি দৃষ্ট হয়। বলে রাখা ভালো, কালী, জগদ্ধাত্রী ও অন্নপূর্ণার পূজা তন্ত্রোক্ত বিধির পূজা এবং তান্ত্রিক পূজা একদিনেই সমাপ্ত করার নির্দেশ রয়েছে। অনেকেই স্মার্ত বিধিতে তিনদিন ধরে দুর্গাপূজার মতো পূজা করে থাকেন, সেটা যজমানের নিজস্ব ইচ্ছা বা রুচি। 

সিংহস্কন্ধসমারূঢ়াং নানালঙ্কারভূষিতাম্।

চতুর্ভূজাং মহাদেবীং নাগযজ্ঞোপবীতিনীম্।।

শঙ্খশার্ঙ্গসমাযুক্তাম্ বামপাণিদ্বয়ান্বিতাম্।

চক্রঞ্চ পঞ্চবাণাংশ্চ ধারয়েত্তঞ্চ দক্ষিণে।।

রক্তবস্ত্রপরিধানাং বালার্কসদৃশীতনুম্।

নারদাদ্যৈর্মুনিগণৈঃ সেবিতাং ভবসুন্দরীম্।।

ত্রিবলীবলয়োপেত নাভিনালমৃণালিনীম্।

করুণামৃত বর্ষিন্যা পশ্যন্তীম্ সাধকম্ দৃশা।।

রত্নদ্বীপে মহাদ্বীপে সিংহাসনসমন্বিতে।

প্রফুল্লকমলারূঢ়াং ধ্যায়েত্তাং ভবগেহিনীম্।।

সিংহবাহনা এই চতুর্ভুজা মহাদেবী নানা অলংকারে সুসজ্জিতা। দেবীর স্কন্ধে নাগোপবীত শোভা পাচ্ছে। দেবীর বামহস্তে শঙ্খ ও ধনু এবং দক্ষিণহস্তে চক্র ও পঞ্চবাণ রয়েছে। তাঁর রক্তবস্ত্রাবৃত তনু যেন প্রভাতের অরুণ সূর্যের মতো প্রতিভাত হচ্ছে। নারদাদি সিদ্ধমুনিগণ তাঁরই সেবা করেন। তাঁর ত্রিবলীবলয়যুক্ত নাভি যেন কমলের মতো। তিনি সাধকের দিকে তাকিয়ে করুণাধারা বর্ষণ করছেন। সাধকের হৃদয়োস্থিত দেবীগৃহে রত্নদ্বীপে তিনি প্রফুল্ল কমললাঞ্ছিত সিংহাসনে অধিষ্ঠিতা। সাধক এভাবেই ভবানীর ধ্যান করেন। 

জগদ্ধাত্রী মূলদুর্গা। শ্রীশ্রীচণ্ডীর প্রথম ধ্যানেই সমরূপযুক্তা চতুর্ভুজা দুর্গার ধ্যান দৃষ্ট হয়। যদিও দেবী এখানে মরকতমণির ন্যায় বর্ণসদৃশা। 

সিংহস্থা শশিশেখরা মরকতপ্রখ্যা চতুর্ভির্ভুজৈঃ

শঙ্খং চক্রধনুঃশরাংশ্চ দধতী নেত্রৈস্ত্রিভিঃ শোভিতা ।

আমুক্তাঙ্গদ-হার-কঙ্কণ-রণৎ-কাঞ্চীক্বণন্নূপুরা

দুর্গা দুর্গতিহারিণী ভবতু নো রত্নোল্লসৎকুণ্ডলা ।।

এছাড়াও তান্ত্রিক পূজাতে পূজার প্রথমেই যে কামিনীর ধ্যান করা হয়, তা জগদ্ধাত্রীরই ধ্যানান্তর। 

সিংহস্কন্ধসমারূঢ়াং রক্তবর্ণাং চতুর্ভুজং।

নানালঙ্কারভূষাঢ্যং রক্তবস্ত্রবিভূষিতাং।।

শঙ্খচক্রধনুর্ব্বান বিরাজিতকরাম্বুজাং।

কামিনীং প্রথমং ধ্যাত্বা জপ পূজা সমাচরেৎ।।

দুর্গার নানা রূপের মধ্যে চতুর্ভুজা রূপেরই প্রাধান্য বেশি। স্মার্তবিধিতে পঞ্চদেবতার পূজায় যে জয়দুর্গার ধ্যান দেখি, তিনিও চতুর্ভুজা। পৌরাণিক দুর্গামন্ত্রে তাঁর পূজা হয়। শঙ্খ, চক্রের পাশাপাশি তাঁর হাতে ত্রিশূল এবং কৃপাণ দেখা যায়। ধ্যানটিও শ্রীশ্রীচণ্ডী থেকেি প্রাপ্ত হয়। এছাড়াও অষ্টভুজা মহিষমর্দিনী আছেন। তন্ত্রশাস্ত্রে ইনি খুবই জনপ্রিয়। শ্রীশ্রীচণ্ডিকার যে রূপ, যাঁকে নবার্ণচণ্ডীও বলা হয়, তিনিও চতুর্ভুজা। বস্তুত, দশভুজা দুর্গার যে রূপের পূজা আমরা করি, তাঁর বিস্তৃত ও পূর্ণাঙ্গ পূজা তন্ত্রশাস্ত্রে সেভাবে দেখা যায় না। বঙ্গদেশে যা পূজা হয়, তা স্মৃতিনিবন্ধকারদের দ্বারা ত্রিপুরাণ (কালিকা, দেবী ভাগবত, বৃহন্নন্দীকেশ্বর) ও নানা শাস্ত্র থেকে সংগৃহীত ও সংকলিত। তন্ত্রের পূজা মূলত যন্ত্রানুগ পূজা। দশভুজা দুর্গার কোনও সঠিক বা সর্বজনবিদিত যন্ত্রের ধারণা পাওয়া যায় না, তাই তাঁর অঙ্গ-আবরণাদি দেবতাও সে অর্থে নেই। পরিবার পূজা হিসেবেই প্রতিমাস্থিত দেবদেবীর পূজা হয়। অপরপক্ষে, জগদ্ধাত্রী, অন্নপূর্ণা, মহিষমর্দিনী বা নবার্ণের পূর্ণাঙ্গ পূজাবিধি ও যন্ত্র, বীজ, অঙ্গ-আভরণ একদম সুস্পষ্ট। সেই বিচারে জগদ্ধাত্রীকে দুর্গার আদি রূপগুলির মধ্যে বিবেচনা করতেই হয়। মনে করা হয়, ত্রিসন্ধ্যায় ত্রিগুণা দেবীর সত্ত্ব, রজো ও তমো গুণের আরাধনা করা হয়। কেন একদিনের পূজা হিসেবেই আমরা জোর দিচ্ছি, তার একটি কারণ হিসেবে বলা যায়, তান্ত্রিক আচারে যন্ত্র অঙ্কণ করে পূজার রীতি আছে, সেইদিনেই পূজার শেষে যন্ত্র উদ্বাসন হয়। যন্ত্র উদ্বাসন হয়ে গেলে বাকি সব নির্মাল্য বা উচ্ছিষ্ট হয়ে যায়। উচ্ছিষ্ট অর্থে, যজ্ঞাবশেষ। তাই ঐ নির্মাল্যের উপর পরদিবস আর পূজার প্রয়োগ হয় না। তাছাড়াও এই পূজাকে শারদীয়া মহাপূজারই সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবে অনেকে মনে করেন, লোক ও ধনবলের অপ্রতুলতায় তিনদিনের শারদীয়া পূজা একদিনের হৈমন্তিকাতে সংক্ষিপ্ত হয়েছে। জগদ্ধাত্রীপূজাতে কুমারী পূজা ও বলিদানের বিধি আছে। সামিষান্ন ভোগ উৎসর্গের রেওয়াজ আছে। জগদ্ধাত্রীরূপের মধ্যে পূর্ণ শাক্তভাব পরিলক্ষিত হয়, এবং তিনি শাক্তাচারেই প্রীতা হন। জগদ্ধাত্রী অর্থে, জগতকে ধারণ করেন যিনি। প্রণব মঠ প্রকাশিত ‘দেবদেবী ও তাঁদের বাহন’ গ্রন্থে স্বামী নির্মলানন্দ লিখেছেন, “অর্ক বা সূর্যই বিশ্বের পোষণকর্তা। পৃথিব্যাদি আবর্তনশীল গ্রহ-উপগ্রহদিগকে সূর্যই নিজের দিকে আকর্ষণ করে রেখেছেন। দেবী জগদ্ধাত্রীর মধ্যেও ধারণী ও পোষণী শক্তির পরিচয় বিদ্যমান। তাই তাঁকে বলা হয়েছে বালার্কসদৃশীতনু। একই কারণে জগৎপালক বিষ্ণুর শঙ্খ-চক্র-শার্ঙ্গধনু-আদি আয়ুধ দেবীর শ্রীকরে। দেবীর রক্তবস্ত্র ও রক্তবর্ণের মধ্যে, দেবীর সিংহাসনস্থ রক্তকমলে সেই রজোগুণেরই ছড়াছড়ি। রজোদীপ্ত বলেই জগদ্ধাত্রী মহাশক্তিময়ী। তাঁর অস্ত্রশস্ত্র, তাঁর বাহন— সকলই তাঁর শক্তিমত্তার ভাবটি আমাদের অন্তরে উদ্দীপ্ত করে দেয়। তবে দেবীর এই বীর্য সংহারের নয়। পরন্তু সমগ্র বিশ্বকে মহাসর্বনাশ থেকে রক্ষাপূর্বক তাকে আত্মসত্তায়— ঋতে ও সত্যে সুস্থির করে রাখবার জন্য। নাগ বা সর্প যোগের পরিচায়ক। উপবীত ব্রাহ্মণ্যশক্তির প্রতীক। দেবী জগদ্ধাত্রী ব্রহ্মময়ী; তিনি পরমা যোগিনী। মহাযোগবলেই ব্রহ্মময়ী ধরে আছেন এই নিখিল বিশ্বসংসারকে। এই জগদ্ধারণই জগদ্ধাত্রীর পরম তপস্যা— তাঁর নিত্য লীলা, তাঁর নিত্য খেলা। জননীরূপে তিনিই বিশ্বপ্রসূতি, আবার ধাত্রীরূপে তিনিই বিশ্বধাত্রী।” আমাদের মতে, উপবীত ব্রাহ্মণ্যশক্তির পরিচায়ক হলেও তা ব্রাহ্মণ্যগুণেরই দ্যোতক। নারীশক্তিও যে ব্রাহ্মণ্যসত্তার অধিকারিনী, দেবী সেই আভাসই দিয়েছেন। রামকৃষ্ণ মঠ প্রকাশিত ‘পূজা বিজ্ঞান’ গ্রন্থের ‘জগদ্ধাত্রী-তত্ত্ব’ শীর্ষক প্রবন্ধে স্বামী প্রমেয়ানন্দ খুব সুন্দর আলোচনা করেছেন, “ধৃতিরূপিণী মহাশক্তি জগদ্ধাত্রী। সগুণ ব্রহ্মের সৃষ্টি, স্থিতি ও বিনাশরূপ তিনগুণের যুগপৎ প্রকাশ যেমন কালীরূপের বৈশিষ্ট্য, তাঁর ধারণী ও পোষণী গুণের যুগপৎ প্রকাশও জগদ্ধাত্রীরূপের বৈশিষ্ট্য। ধা ধাতুর অর্থ ধারণ বা পোষণ। ভগবতী নিখিল বিশ্বকে বক্ষে ধারণ করে পরিপালন করেন বলে মুনিগণ কর্তৃক তিনি ত্রৈলোক্যজননী নামে অভিহিত। নিয়ত-পরিবর্তনশীল এই জগতের পেছনে রয়েছে তার রক্ষণ ও পোষণের জন্য অচিন্তনীয়া মহাশক্তির এক অদ্ভুত খেলা। সতত পরিবর্তনশীল জগৎ সেই মহাশক্তির দ্বারা বিধৃত— যিনি নিত্যা, শাশ্বতী ও অপরিবর্তনীয়া। দেবী জগদ্ধাত্রীই সেই ধৃতিরূপিণী মহাশক্তি।” শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলতেন, “মন-করীকে যে বশ করতে পারে তারই হৃদয়ে জগদ্ধাত্রী উদয় হন। সিংহবাহিনীর সিংহ তাই হাতীকে জব্দ করে রেখেছে।” শ্রীশ্রীচণ্ডীতেও মহিষাসুরকে হস্তীরূপ ধারণ করতে দেখা গেছে। প্রসঙ্গত, শ্রীমা সারদামণি দেবীর জন্মভিটায় অর্থাৎ জয়রামবাটীতে তাঁর মা জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা করেন। এখনও নিরবচ্ছিন্নভাবে সেই পূজা চলে আসছে। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের বহু শাখাতেই এই পূজা হয়, তবে সারদা মঠে সন্ন্যাসিনী মায়েদের জগদ্ধাত্রী পূজা বিশেষ আকর্ষণীয়। 

ঐতিহাসিক প্রমানানুযায়ী, বহু প্রাচীন কাল থেকে চতুর্ভুজা দুর্গা তথা জগদ্ধাত্রী পূজার চল রয়েছে। পরবর্তীকালে তা জনপ্রিয় করেন কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও তারপর চন্দননগরের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। জাঁকজমকে এখনও চলে আসছে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ী ও সন্নিহিত অঞ্চলে প্রসারিত বহু পূজা। চন্দননগরেও বহু পূজার সূত্রপাত হয়ে এসেছে ২৫০ বছর ধরে। চন্দননগর এখনও বিখ্যাত প্রতিমার শোলার সাজ, উচ্চতা ও আলোকসজ্জার জন্য। আর কৃষ্ণনগর বিখ্যাত আড়ম্বর, স্বর্ণালংকার এবং পূজাপরবর্তী শোভাযাত্রা বা ‘সাঙ”-এর জন্য। দেশবিদেশের বহু মানুষ এই দুটি জায়গার পূজা দর্শন করতে আসেন। আবার শান্তিপুরের রায়বাড়ির জগদ্ধাত্রী পূজার সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশভাগের স্মৃতি। রাজশাহী জেলায় শুরু হওয়া পূজা দেশভাগের পর থেকে এই বাংলাতেই হয়। গতবছর মহামারীর কারণে অনেক পূজাই আকারে ছোটো হয়ে গেছে। এবছর প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের জেরে হয়তো কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রা বা ’সাঙ’-ও বন্ধ হয়ে যেতে চলেছে। ভগবতী জগদ্ধাত্রীর চরণে সকল কিছুর শুভকামনা ও নিষ্ফল প্রতিবাদ ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই। প্রার্থনা করব, সকল কুসংস্কৃতির উৎস এই মন-করী মায়ের পদতলে নিষ্পিষ্ট হোক্। স্বয়ং শিবকেও জগদ্ধাত্রীচরণে বন্দনা করতে হয়েছে—

আধারভূতে চাধেয়ে ধৃতিরূপে ধুরন্ধরে |

ধ্রুবে ধ্রুবপদে ধীরে জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে || ১ ||

শবাকারে শক্তিরূপে শক্তিস্থে শক্তিবিগ্রহে |

শাক্তাচারপ্রিয়ে দেবি জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে || ২ ||

জয়দে জগদানন্দে জগদেকপ্রপূজিতে |

জয় সর্ব্বগতে দুর্গে জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে || ৩ ||

সূক্ষ্মাতিসুক্ষ্মরূপে চ প্রাণপানাদিরূপিণি |

ভাবাভাবস্বরূপে চ জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে || ৪ ||

কালাদিরূপে কালেশে কালাকাল বিভেদিনি |

সর্ব্বস্বরূপে সর্ব্বজ্ঞে জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে || ৫ ||

মহাবিঘ্নে মহোৎসাহে মহামায়ে বরপ্রদে |

প্রপঞ্চসারে সাধ্বীশো জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে || ৬ ||

অগম্যে জগতামাধ্যে মাহেশ্বরি বরাঙ্গনে |

অশেষ রূপে রূপস্থে জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে || ৭ ||

দ্বিসপ্তকোটিমন্ত্রাণাং শক্তিরূপে সনাতনি |

সর্ব্বশক্তিস্বরূপে চ জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে || ৮ ||

তীর্থযজ্ঞতপোদানযোগসারে জগন্ময়ি |

ত্বমেব সর্ব্বং সর্ব্বস্থে জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে || ৯ ||

দয়ারূপে দয়াদৃষ্টে দয়ার্দ্র দুঃখমোচনি |

সর্ব্বপত্তারিকে দুর্গে জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে || ১০ ||

অগম্যধামধামস্থে মহাযোগিশ-হৃতপুরে |

অমেয়ভাবকূটস্থে জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে || ১১

Ganesh Thakur

0 Reviews

Related post