পাঠে-পাঠান্তরে দুর্গাপূজা
“তং অগ্নিবর্ণাং তপসা জ্বলন্তীং বৈরোচনীং কর্মফলেষু জুষ্টাম্। দুর্গাং দেবীং শরণমহং প্রপদ্যে সুতরসি তরসে নমঃ।।”
হে অগ্নিবর্ণা মহামায়া, প্রজ্জ্বলিত হুতাশনে রিপুবারণকারিনী, কৃতকার্যফলের দ্বারা প্রসাদিতা, আমি আপনার চরণারবিন্দে উপনীত। হে দুর্গতিনিবারিণী দেবী, প্রণতকে এই সংসারদুর্গম থেকে কৃপা করে ত্রাণ করুন।
পূজিব চন্দনে দিয়া পদ্ম-বিল্ব-জবা।
শারদা সারদা আর ক্ষিরোদসম্ভবা।
দক্ষিণে কুমারে বামে গিরিসুতাসুতে।
রক্ষিয়া পূজিব আমি হঞা ভক্তিযুতে।।
এতেক বিধানে আজি রচি মহাপূজা।
করি অরিনাশ তাহে তুষি দশভুজা।।
ততেক ভবানী আমি ভজিব এ ভবে।
যতেক দিনেতে এই দেহে প্রাণ র’বে।।
কালীদাস কহে দুর্গা নামের অনলে।
পূর্ণাহুতি দিব দেহ ‘জয় দুর্গা’ ব’লে।।
শরতের সূর্যের মতো প্রখরকিরণময়ী কিন্তু কোমলা, বাৎসল্যময়ী দুর্গার আরাধনা সমগ্র ভারতে অতি প্রাচীন এক ইতিহাস বহন করে চলেছে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কোথাও তিনি এই সময়ে লোকাচারে বন্দিত হচ্ছেন, কোথাও ব্রাহ্মণ্য আচারে নবরাত্রিবিহিত বিধিতে পূজিত হচ্ছেন আর বঙ্গে সমস্ত জাতি-বর্ণ মিলে এক মহাযজ্ঞের অনুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে, বাঙালিরা এই যজ্ঞকেই অভিহিত করছেন দুর্গাপূজা নামে। তৈত্তিরীয়ব্রাহ্মণে বৈদিক শরৎকালীন রুদ্রযজ্ঞে রুদ্রের সঙ্গে অম্বিকার অর্চনের বিধি উল্লেখ করেছেন, যিনি রুদ্রের প্রচণ্ডতাকে শান্ত করেন। কালক্রমে ইনিই আজ শরতের রাজকুমারী উমা হয়ে পিতৃগৃহে আসেন তিনদিনের জন্য।
শারদীয়া দুর্গাপূজা যে শরৎকালীন রুদ্রযজ্ঞেরই অনুবর্তন এবং দেবী দুর্গা যে বেদেরই দেবী, তা নিয়ে বর্তমানে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। মহামতি সায়ণাচার্য স্বয়ং কৃষ্ণযজুর্বেদের ভাষ্যে অম্বিকাসহ রুদ্রযজ্ঞের উল্লেখ করেছেন। যজ্ঞকুণ্ডে পূজিত হতেন দক্ষতনয়া বা হব্যবাহিনীর মতো দেবীর স্বরূপ। ঋগ্বেদে দেবীসূক্ত, রাত্রিসূক্ত, শ্রীসূক্তে নামান্তরে এই দেবীই বন্দিতা হয়েছেন। বিষ্ণুসংহিতায় দুর্গাসাবিত্রী নামের উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও অদিতি, ঊষা বা সরস্বতীর মতো প্রধানা বৈদিক দেবীর মধ্যে আমরা দুর্গাস্বরূপের সাযুজ্য পাই। বেদে বা সংহিতা গ্রন্থে সপ্তমাতৃকার মধ্যে আমরা পাই, ব্রহ্মাণী, মাহেশ্বরী, বৈষ্ণবী, বারাহী, ইন্দ্রাণী বা কৌমারী, নারসিংহী ও চামুণ্ডা, যাঁরা পরবর্তীতে দুর্গাসপ্তশতীতে অষ্টশক্তি হয়েছেন এবং বর্তমানে দুর্গাপূজাতেও পূজিতা হচ্ছেন।
মার্কণ্ডেয় পুরাণান্তর্গত ‘শ্রীশ্রীচণ্ডী’ ও বর্তমান দুর্গাপূজা অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পৃক্ত। বেদের সপ্তমাতৃকা বিভিন্ন পুরাণে একাদশ মাতৃকা বা অষ্টমাতৃকায় রূপান্তরিত হয়েছেন। শ্রীশ্রীচণ্ডীর দেবীকবচে আমরা উল্লেখ পাই নবদুর্গার, শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুষ্মাণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রী, মহাগৌরী এবং সিদ্ধিদাত্রী। উত্তর ভারতে নবরাত্রি উৎসবে নয় দিনে দুর্গার এই নয়টি রূপের বিশেষ অর্চনা প্রসিদ্ধ।
প্রথমং শৈলপুত্রীতি দ্বিতীয়ং ব্রহ্মচারিণী।
তৃতীয়ং চন্দ্রঘণ্টেতি কুষ্মাণ্ডেতি চতুর্থকম্।।
পঞ্চমং স্কন্দমাতেতি ষষ্ঠং কাত্যায়নী তথা।
সপ্তমং কালরাত্রীতি মহাগৌরীতি চাষ্টমম্।
নবমং সিদ্ধিদাত্রী চ নবদুর্গাঃ প্রকীর্তিতা।।
শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণে উল্লেখ আছে, ব্রজগোপীরা শ্রীকৃষ্ণকে দয়িতরূপে পাওয়ার জন্য দশভুজা মহিষমর্দিনী কাত্যায়নীর পূজা করেছিলেন। রাধাতন্ত্রেও অনুরূপ মন্ত্র নিবন্ধিত আছে। আজও বৈষ্ণব সমাজে ‘কৃষ্ণভক্তিপ্রদা’ দুর্গার পূজা আয়োজিত হয়।
ওঁ কাত্যায়নী মহামায়ে মহাযোগিন্যধীশ্বরী।
নন্দগোপসুতং দেবি পতিং মে কুরুতে নমঃ।।
উক্ত মহাপুরাণেই রাসপঞ্চাধ্যায়ে মহারাসলীলার প্রারম্ভে কৃষ্ণকর্তৃক যোগমায়ার সম্পর্কের উল্লেখ আছে। আবার শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাবের দিনেই মহামায়াও আবির্ভূতা হয়েছিলেন যশোদাগৃহে, যাঁকে বসুদেব কারাগারে নিয়ে গিয়েছিলেন। এই ঘটনার সংকেত শ্রীশ্রীচণ্ডীতেও পাওয়া যায়— নন্দগোপগৃহে জাতা যশোদাগর্ভসম্ভূতা।
পুরাণোক্ত দশভুজার ধ্যানেও অষ্টশক্তি বা যোগিনীর উল্লেখ আছে—
উগ্রচণ্ডা প্রচণ্ডা চ চণ্ডোগ্রা চণ্ডনায়িকা।
চণ্ডা চণ্ডবতী চৈব চণ্ডরূপাতিচণ্ডিকা॥
অষ্টাভিঃ শক্তিভিস্তাভিঃ সততং পরিবেষ্টিতাম্।
চিন্তয়েজ্জগতাং ধাত্রীং ধর্ম্মকামার্থমোক্ষদাম্॥
কালিকাপুরাণ, দেবীপুরাণ, বৃহন্নন্দিকেশ্বর পুরাণে দুর্গার বিস্তৃত পূজাবিধি আছে। যদিও বর্তমানে বৃহন্নন্দিকেশ্বর পুরাণের কোনও অস্তিত্ব পাওয়া যায় না, কিন্তু পূজাবিধিটি রয়েছে। শ্রীরামচন্দ্রের অকালবোধনে ব্রহ্মা কর্তৃক দেবী কল্পিতা হয়েছিলেন বিল্বমূলে। সেই ঘটনার উল্লেখ ও সেই বোধনপূজার অনবিচ্ছিন্ন-পরম্পরার প্রমাণ রয়েছে পুরাণে।
রামস্যানুগ্রহার্থায় রাবণস্য বধায় চ।
রাত্রারেব মহাদেবী ব্রহ্মণা বোধিতা পুরা।।
ততস্তু ত্যক্তনিদ্রা সা নন্দায়ামাশ্বিনে সিতে।
জগাম নগরীং লঙ্কাং যত্রাসীৎ রাঘবঃ পুরা।।
নিহতে রাবণে বীরে নবম্যাং সকলৈঃ সুরৈঃ।
বিশেষপূজাং দুর্গায়াশ্চক্রে লোকপিতামহঃ।।
ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে ও শ্রীশ্রীচণ্ডীতে মেধস মুনির উপদেশে রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্যের শরৎকালে ‘মহীময়ী’ অর্থাৎ মৃন্ময়ী প্রতিমাতে দুর্গাপূজার উল্লেখ আছে।
কাত্যায়নীতন্ত্র, বারাহীতন্ত্র, তন্ত্রসার প্রমুখ তন্ত্রগ্রন্থেও দুর্গাপূজার বিস্তৃত ব্যাখ্যা আছে। কাত্যায়নী তন্ত্রে প্রতিপদাদি নবমী তিথি পর্যন্ত নবরাত্রিতে যন্ত্র স্থাপন করে অষ্টাদশভুজা দুর্গার ষোড়শোপচার পূজার বিস্তৃত বর্ণনা আছে।
প্রাণতোষণী নামক তান্ত্রিক নিবন্ধ গ্রন্থে দুর্গাপূজার উল্লেখ রয়েছে। বঙ্গদেশে দশভুজা দুর্গার পূজার উল্লেখও আমরা সেখানে পাই। বর্তমান মূর্তিকল্পে দেবী দুর্গার দুইপাশে যে লক্ষ্মী ও সরস্বতীর অধিষ্ঠান দেখা যায়, তাও প্রাণতোষণী গ্রন্থে উল্লেখ আছে—
যা নিত্যা প্রকৃতির্নিত্যা দুর্গায়া দক্ষিণে স্থিতা।
সারদা ভারতী নিত্যা বামভাগে সদা স্থিতা।।
আবার ‘জয়া বামে স্থিতা বিদ্যা বিজয়া চাপি দক্ষিণে’, এই উক্তির মাধ্যমে জয়া-বিজয়ার প্রসঙ্গও দেখা যায়।
দেবী দুর্গার দশভুজা রূপকল্পের ধ্যানে আমরা মহাশক্তির এক পূর্ণ আভাস পাই। তিনি জটাজুটএ চন্দ্রার্ধধারিণী, ত্রিনেত্রা, অতসীপুষ্পের মতো গাত্রবর্ণা। ত্রিভঙ্গভঙ্গিতে ত্রিভুবনমনমোহিনী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করছেন। তিনি দশভুজা, নানায়ুধপরিষ্কৃতা, তাঁর দক্ষিণপদ রয়েছে সিংহের উপর, বাম অঙ্গুষ্ঠ মহিষের উপর। অষ্টশক্তি দ্বারা বেষ্টিতা হয়ে তিনি নিত্য দেবতাদের বন্দনা গ্রহণ করছেন। এই জগদ্ধাত্রী দেবীই আমাদের চতুর্বর্গদায়িনী।
ওঁ জটাজুটসমাযুক্তামৰ্দ্ধেন্দুকৃতশেখরাম্।
লোচনত্রয়সংযুক্তাং পুর্ণেন্দুসদৃশাননাম্॥
অতসীপুষ্পবর্ণাভাং সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচনাম্।
নবযৌবনসম্পন্নাং সর্ব্বা্ভরণ ভূষিতাম্॥
সুচারুদশনাং তদ্বৎ পীনোন্নতপয়োধরাম্।
ত্রিভঙ্গস্থানসংস্থানাং মহিষাসুরমর্দিনীম্॥
মৃণালায়তসংস্পৰ্শ-দশবাহুসমন্বিতাম্।
ত্রিশূলং দক্ষিণে ধ্যেয়ং খড়গং চক্রং ক্রমাদধঃ॥
তীক্ষবাণং তথা শক্তিং দক্ষিণেষু বিচিন্তয়েৎ।
খেটকং পূর্ণচাপঞ্চ পাশমেঙ্কুশমেব চ॥
ঘণ্টাং বা পরশুং বাপি বামতঃ সন্নিবেশয়েৎ।
অধস্তান্মহিষং তদ্বদ্বিশিরস্কং প্রদর্শয়েৎ॥
শিরশ্ছেদোদ্ভবং তদ্বদ্দানবং খড়গপাণিনম্।
হৃদি শূলেন নির্ভিন্নং নির্য্যদন্ত্রবিভূষিতম্॥
রক্তরক্তীকৃতাঙ্গঞ্চ রক্তবিস্ফুরিতেক্ষণম্।
বেষ্টিতং নাগপাশেন ভ্রকুটীভীষণাননম্॥
সপাশবামহস্তেন ধৃতকেশঞ্চ দুৰ্গয়া।
বমদ্রুধিরবক্ত্রঞ্চ দেব্যাঃ সিংহং প্রদর্শয়েৎ॥
দেব্যাস্তু দক্ষিণং পাদং সমং সিংহোপরিস্থিতম্।
কিঞ্চিদুৰ্দ্ধং তথা বামমঙ্গুষ্ঠং মহিষোপরি॥
স্তূয়মানঞ্চ তদ্রুপমমরৈঃ সন্নিবেশয়েৎ।
উগ্রচণ্ডা প্রচণ্ডা চ চণ্ডোগ্রা চণ্ডনায়িকা।
চণ্ডা চণ্ডবতী চৈব চণ্ডরূপাতিচণ্ডিকা॥
অষ্টাভিঃ শক্তিভিস্তাভিঃ সততং পরিবেষ্টিতাম্।
চিন্তয়েজ্জগতাং ধাত্রীং ধর্ম্মকামার্থমোক্ষদাম্॥
কৃত্তিবাসী রামায়ণে শ্রীরামের দুর্গাপূজার বিস্তৃত ব্যাখ্যান আছে। রাবণের পূজায় দেবী কালী সন্তুষ্ট হওয়ায় রাবণকে রক্ষা করেন তিনি। শ্রীরাম ও সহচরদল পড়ে যান মহা মুশকিলে।
অসিত-বরণী কালী কোলে দশানন।
রূপের ছটায় ঘন তিমির নাশন।।
অলকা ঝলকা উচ্চ কাদম্বিনী কেশ।
তাহে শ্যামরূপে নীল সৌদামিনী বেশ।।
কর পদ নখে শশী অলকা প্রকাশে।
বিম্বফল স্খলিত অধরে মন্দ হাসে।।
শোক গেল রাবণের দুঃখ বিনাশনে।
হইল আহ্লাদ চিত্ত দেবী দরশনে।।
নয়নে গলিত ধারা সবিনয়ে কয়।
দয়াময়ী বিনা মোরে সদয়া কে হয়।।
সাক্ষাতে করিলা স্তব রাজা লঙ্কেশ্বর।
রাম সনে সংগ্রামে চলিল অতঃপর।।
ছাড়ে ঘন হুহুঙ্কার গভীর গর্জ্জনে।
বাণ বরিষণ করে তর্জ্জন গর্জ্জনে।।
আগুসারি যুদ্ধে এল রাম রঘুপতি।
দেখিলেন রাবণের রথে হৈমবতী।।
বিস্ময় হইয়া রাম ফেলে ধনুর্ব্বাণ।
প্রণাম করিলা তাঁরে করি মাতৃজ্ঞান।।
বিভীষণে কন তবে ত্রিলোকের নাথ।
রাবণ বিনাশে মিতা ঘটিল ব্যাঘাত।।
কার সাধ্য বিনাশিতে পারে দশাননে।
রক্ষিছে রাবণে আজি হর-বরাঙ্গনে।।
ঐ দেখ রাবণের রথে বিভীষণ।
জলদ-বরণী-কোলে রাজা দশানন।।
শ্রীরামসহ সকলে ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলে তিনি দশভুজা দুর্গার অকালবোধনের বিধান দেন।
ইন্দ্রের শুনিয়া বাণী, কন কমণ্ডলু-পাণি,
উপায় কেবল দেবীপূজা।
তুমি পূজি যে চরণ, জিনিলে অসুরগণ,
বোধিয়া শরতে দশভুজা।।
পূজা রাম কৈলে তাঁর, হবে রাবণ সংহার,
শুন সার সহস্রলোচন।
শুনি কহে সুরপতি, যাহ তুমি শীঘ্রগতি,
জানাও শ্রীরামে বিবরণ।।
প্রেমে পুলকিত চিত, পদ্মযোনি আনন্দিত,
শ্রীরাম নিকটে উপনীত।
বিনয় করিয়া কয়, শুন প্রভু দয়াময়,
রাবণ বধের যে বিহিত।।
ব্রহ্মার বচন শুনি, কন রাম গুণমণি,
কহ বিধি কি উপায় করি।
মিথ্যা শ্রম করিলাম, অনুপায়ে ঠেকিলাম,
রক্ষিল রাবণে মহেশ্বরী।।
বিধাতা কহেন প্রভু, এক কর্ম্ম কর বিভু,
তবে হবে রাবণ সংহার।
অকালে বোধন করি, পূজ দেবী মহেশ্বরী,
তরিবে হে এ দুঃখ-পাথার।।
শ্রীরাম কহেন তবে, কিরূপে পূজিতে হবে,
অনুক্রম কহ শুনি তার।
শ্রীরাম আপনি কয়, বসন্তে শুদ্ধ সময়,
শরৎ অকাল এ পূজার।।
বিধি আছে নিরূপণ, নিদ্রা ভাঙ্গিতে বোধন,
কৃষ্ণা নবমীর দিনে তাঁর।
সে দিন হয়েছে গত, প্রতিপদে আছে মত,
কল্পারম্ভে সুরথ রাজার।।
সে দিন নাহিক আর, পূজা হবে কি প্রকার,
শুক্লা ষষ্ঠী মিলিবে প্রভাতে।
কন্যারাশি মাস বটে, কিন্তু পূজা নাহি ঘটে,
অত্র যোগ সব হৈল যাতে।।
বিধাতা কহেন সার, শুন বিধি দিই তার,
কর – ষষ্ঠীকল্পেতে বোধন।
ব্যাঘাত না হবে তায়, বিধি খণ্ডি পুনরায়,
কল্পখণ্ডে সুরথ রাজন।।
এই উপদেশ কন, শুনি রাম সুখী হন,
বিধাতা গেলেন নিজ ধাম।
প্রভাত হইল নিশা, প্রকাশ পাইল দিশা,
স্নান দান করিলা শ্রীরাম।।
বনপুষ্প ফলমূলে, গিয়া সাগরের কূলে,
কল্প কৈলা বিধির বিচার।
পূজি দুর্গা রঘুপতি, করিলেন স্তুতি নতি,
বিরচিল চণ্ডীপূজা সার।।
শ্রীরামের মৃন্ময়ী মূর্তিতেই দেবীর পূজা করেছিলেন। কৃত্তিবাস তাই লিখেছেন। নানা উপচারে, নৃত্যগীতবাদ্যে, ভক্তিতে, আড়ম্বরে দেবীর পূজা সম্পন্ন হয়।
চণ্ডীপাঠ করি রাম করিলা উৎসব।
গীত নাট্ট করে জয় দেয় কপি সব।।
প্রেমানন্দে নাচে আর দেবীগুণ গায়।
চণ্ডীর অর্চ্চনে দিবাকর অস্ত যায়।।
সায়াহ্ন-কালেতে রাম করিলা বোধন।
আমন্ত্রণ অভরায় বিল্বাদি-বাসন।।
আপনি গড়িয়া রাম মূরতি মৃন্ময়ী।
হইতে সংগ্রামে দুষ্ট রাবণ বিজয়ী।।
আচারেতে আরতি করিলা অধিবাস।
বান্ধিলা পত্রিকা নব বৃক্ষের বিলাস।।
এইরূপে উদ্যোগ করিলা দ্রব্য যত।
পদ্ধতি প্রমাণে আছে নিয়ম যেমত।।
অসাধ্য সুসাধ্য তাহে নাহি অনুমান।
ত্রিভুবন ভ্রমিয়া আনিল হনুমান।।
গত হৈল ষষ্ঠী-নিশা দিবা সুপ্রভাত।
উদয় হইল পূর্ব্বে দিবসের নাথ।।
স্নান করি আসি প্রভু পূজা আরম্ভিলা।
বেদ-বিধি মতে পূজা সমাপ্ত করিলা।।
শুদ্ধসত্ত্বভাবে পূজা সাত্ত্বিকী আখ্যান।
গীতনাট্ট চণ্ডীপাঠে দিবা অবসান।।
সপ্তমী হইল সাঙ্গ অষ্টমী আইল।
পুনর্ব্বার রামচন্দ্র অর্চ্চনা করিল।।
নিশাকালে সন্ধিপূজা কৈলা রঘুনাথ।
নৃত্যগীতে বিভাবরী হইল প্রভাত।।
নবমীতে পূজে রাম দেবীর চরণে।
নৃত্যগীতে নানা মতে নিশি জাগরণে।।
অষ্টোত্তর শত নীলপদ্ম আনেন হনুমান। বিপর্যয় ঘটে এরপর। দেবী ছল করে একটি পদ্ম হরণ করেন। পঙ্কজলোচন শ্রীরাম পূজা অসম্পূর্ণ হচ্ছে দেখে তীরবিদ্ধ করে নিজের একটি চোখ দেবীর পায়ে নিবেদন করতে উদ্যত হলে দেবী এসে তাঁকে নিরস্ত করেন ও বরদান করেন। শ্রীরাম অশেষ স্তুতিনতি দ্বারা প্রসন্না করেন দেবীকে।
রামের বচন শুনি, বিষাদে হরিষ গণি,
স্তুতিবাক্যে কাত্যায়নী কন।
শুন প্রভু দয়াময়, অখিল ব্রহ্মাণ্ডচয়,
হও তুমি ব্রহ্ম-সনাতন।।
তুমি আদি ভগবান, অখণ্ড কাল সমান,
বিশ্ব রহে তব লোমকূপে।
তুমি চরাচর-গতি, অচ্যূত অব্যয় অতি,
ব্যাপকতা পরমাণুরূপে।।
মায়ায় মনুষ্য তুমি, চতুর্ব্ব্যূহ আসি ভূমি,
নাশিতে রাক্ষস দুরাচার।
ভব-ভাব্য প্রভু হও, কভু কোন্ ভাবে রও,
শুদ্ধতত্ত্ব কে জানে তোমার।।
তোমার জানকী যিনি, পরমা প্রকৃতি তিনি,
রাবণের কি সাধ্য হরিতে।
সীতা উদ্ধারের ছলে, সেতু বান্ধি সিন্ধুজলে,
রাক্ষসের বিনাশ করিতে।।
দেখহ মনে বিচারি, রাবণ তোমার দ্বারী,
পূর্ব্বে ছিল বৈকুণ্ঠ নগরে।
ব্রহ্মাশাপে ধরা এল, শত্রু ভাবেতে পাইল,
তেঁই প্রভু তুমি ধরা পরে।।
অকাল-বোধন পূজা, কৈলে তুমি দশভুজা,
বিধিমতে করিলে বিন্যাস।
লোকে জানাবার জন্য, আমারে করিতে ধন্য,
অবনীতে করিলে প্রকাশ।।
রাবণে ছাড়িনু আমি, বিনাশ করহ তুমি.
এত বলি হৈলা অন্তর্দ্ধান।
নাচে গায়ে কপিগণ, প্রেমানন্দে নারায়ণ,
নবমী করিলা সমাধান।।
দশমীতে পূজা করি, বিসর্জ্জিয়া মহেশ্বরী,
সংগ্রামে চলিলা রঘুপতি।
আদেশ পাইয়া রাম, সিদ্ধ কৈল মনস্কাম,
চণ্ডীলীলা মধুর ভারতী।।
আজও শ্রীরামের বিজয়োৎসবের সৌজন্যে বিজয়া দশমী পালন হয় বঙ্গে।
ব্যাসোক্ত মহাভারতের বর্তমান সংস্করণে ও দক্ষিণ ভারতীয় সংস্করণে যুধিষ্ঠির ও অর্জুনকৃত দুর্গা স্তুতিরও উল্লেখ পাওয়া যায়। অজ্ঞাতবাসের সময় যুধিষ্ঠির নির্বিঘ্ন অজ্ঞাতবাসের কামনায় দেবীর স্তুতি করেন। দেবী প্রসন্না হয়ে বরদান করেন।
বিরাটনগরং রম্যং গচ্ছমানো যুধিষ্ঠিরঃ ।
অস্তুবন্ মনসা দেবীং দুর্গাং ত্রিভুবনেশ্বরীম্ ॥
যশোদাগর্ভসম্ভূতাং নারায়ণবরপ্রিয়াম্ ।
নন্দগোপকুলেজাতাং মঙ্গল়্যাং কুলবর্ধনীম্ ॥
কংসবিদ্রাবণকরীমসুরাণাং ক্ষয়ং করীম্ ।
শিলাতটবিনিক্ষিপ্তামাকাশং প্রতিগামিনীম্ ॥
বাসুদেবস্য ভগিনীং দিব্যমাল্য বিভূষিতাম্ ।
দিব্যাম্বরধরাং দেবীং খদ্গখেটকধারিণীম্ ॥
ভারাবতরণে পুণ্যে যে স্মরন্তি সদাশিবাম্ ।
তান্বৈ তারয়সে পাপাৎ পঙ্কেগামিব দুর্বলাম্ ॥
স্তোতুং প্রচক্রমে ভূয়ঃ বিবিধৈঃ স্তোত্রসম্ভবৈঃ ।
আমন্ত্র্য দর্শনাকাঙ্ক্ষী রাজা দেবীং সহানুজঃ ॥
নমোঽস্তু বরদে কৃষ্ণে কুমারি ব্রহ্মচারিণি ।
বালার্ক সদৃশাকারে পূর্ণচন্দ্রনিভাননে ॥
চতুর্ভুজে চতুর্বক্ত্রে পীনশ্রোণিপয়োধরে ।
ময়ূরপিঞ্ছবলয়ে কেয়ূরাঙ্গদধারিণি ॥
ভাসি দেবি যদা পদ্মা নারায়ণপরিগ্রহঃ ।
স্বরূপং ব্রহ্মচর্যং চ বিশদং তব খেচরি ॥
কৃষ্ণচ্ছবিসমা কৃষ্ণা সঙ্কর্ষণসমাননা ।
বিভ্রতী বিপুলৌ বাহু শক্রধ্বজসমুছ্রয়ৌ ॥
পাত্রী চ পঙ্কজী কণ্ঠী স্ত্রী বিশুদ্ধা চ যা ভুবি ।
পাশং ধনুর্মহাচক্রং বিবিধান্যায়ুধানি চ ॥
কুণ্ডলাভ্যাং সুপূর্ণাভ্যাং কর্ণাভ্যাং চ বিভূষিতা ।
চন্দ্রবিস্পার্ধিনা দেবি মুকেন ত্বং বিরাজসে ॥
মুকুটেন বিচিত্রেণ কেশবন্ধেন শোভিনা ।
ভুজঙ্গাঽভোগবাসেন শ্রোণিসূত্রেণ রাজতা ॥
বিভ্রাজসে চ বদ্ধেন ভোগেনেবেহ মন্থরঃ ।
ধ্বজেন শিখিপিঞ্ছানামুছ্রিতেন বিরাজসে ॥
কৌমারং ব্রতমাস্থায় ত্রিদিবং পাবিতং ত্বয়া ।
তেন ত্বং স্তূয়সে দেবি ত্রিদশৈঃ পূজ্যসেঽপি চ ॥
ত্রৈলোক্য রক্ষণার্থায় মহিষাসুর ঘাতিনি ।
প্রসন্না মে সুরশ্রেষ্ঠে দয়াং কুরু শিবা ভব ॥
জয়া ত্বং বিজয়া চৈব সঙ্গ্রামে চ জয়প্রদা ।
মমাপি বিজয়ং দেহি বরদা ত্বং চ সাম্প্রতম্ ॥
বিন্ধ্যে চৈব নগশ্রেষ্ঠে তবস্থানং হি শাশ্বতম্ ।
কালি কালি মহাকালি শীধুমাংস পশুপ্রিয়ে ॥
কৃতানুয়াত্রা ভূতৈস্ত্বং বরদা কামচারিণি ।
ভারাবতারে যে চ ত্বাং সংস্মরিষ্যন্তি মানবাঃ ॥
প্রণমন্তি চ যে ত্বাং হি প্রয়াণে তু নরা ভুবি ।
ন তেষাং দুর্লভং কিঞ্চিৎ পুত্রতো ধনতোঽপি বা ॥
দুর্গাত্তারয়সে দুর্গে তত্বং দুর্গা স্মৃতা জনৈঃ ।
কান্তারেষ্ব-বসন্নানাং মগ্নানাং চ মহার্ণবে ॥
(দস্যুভির্বা নিরুদ্ধানাং ত্বং গতিঃ পরমা নৃণাম্ ।)
জলপ্রতরণে চৈব কান্তারেষু অবটেষু চ ।
যে স্মরন্তি মহাদেবীং ন চ সীদন্তি তে নরাঃ ॥
ত্বং কীর্তিঃ শ্রীঃ ধৃতিঃ সিদ্ধিঃ হ্রীঃ বিদ্যা সন্ততির্মতিঃ ।
সন্ধ্যা রাত্রিঃ প্রভা নিদ্রা জ্যোৎস্না কান্তিঃ ক্ষমা দয়া ॥
নৃণাং চ বন্ধনং মোহং পুত্রনাশং ধনক্ষয়ম্ ।
ব্যাধিং মৃত্যুং ভয়ং চৈব পূজিতা নাশয়িষ্যসি ॥
সোহং রাজ্যাৎপরিভ্রষ্টঃ শরণং ত্বাং প্রপন্নবান্ ।
প্রণতশ্চ যথা মূর্ধ্না তব দেবি সুরেশ্বরি ॥
ত্রাহি মাং পদ্মপত্রাক্ষি সত্যে সত্যা ভবস্ব নঃ ।
শরণং ভব মে দুর্গে শরণ্যে ভক্তবৎসলে ॥
এবং স্তুতা হি সা দেবী দর্শয়ামাস পাণ্ডবম্ ।
উপগম্য তু রাজানমিদং বচনমব্রবীৎ ॥
শৃণু রাজন্ মহাবাহো মদীয়ং বচনং প্রভো ।
ভবিষ্যতি অচিরাদেব সঙ্গ্রামে বিজয়স্তব ॥
মম প্রসাদাৎ নির্জিত্য হত্বা কৌরব বাহিনীম্ ।
রাজ্যং নিষ্কণ্টকং কৃত্বা ভোক্ষ্যসে মেদিনীং পুনঃ ॥
ভ্রাতৃভিঃ সহিতো রাজন্ প্রীতিং যাস্যসি পুষ্কলাম্ ।
মৎপ্রসাদাচ্চ তে সৌখ্যমারোগ্যং চ ভবিষ্যতি ॥
যে চ সঙ্কীর্তয়িষ্যন্তি লোকে বিগতকল্মষাঃ ।
তেষাং তুষ্টা প্রদাস্যামি রাজ্যমায়ুঃ বপুঃ সুতম্ ॥
প্রবাসে নগরে বাপি সঙ্গ্রামে শতৃসঙ্কটে ।
অটব্যাং দুর্গকান্তারে সাগরে গহনে গিরৌ ॥
যে স্মরিষ্যন্তি মাং রাজন্ যথাহং ভবতা স্মৃতা ।
ন তেষাং দুর্লভং কিঞ্চিৎ অস্মিন্ লোকে ভবিষ্যতি ॥
ইদং স্তোত্রবরং ভক্ত্যা শৃণুয়াৎ বা ফঠেত বা ।
তস্য সর্বাণি কার্যাণি সিধ্ধিং যাস্যন্তি পাণ্ডবাঃ ॥
মৎপ্রসাদাচ্চ বস্সর্বান্ বিরাটনগরে স্থিতান্ ।
ন প্রজ্ঞাস্যন্তি কুরবঃ নরা বা তন্নিবাসিনঃ ॥
ইত্যুক্ত্বা বরদা দেবী যুধিষ্ঠিরমরিন্দমম্ ।
রক্ষাং কৃত্বা চ পাণ্ডূনাং তত্রৈবান্তরধীয়ত ॥ ৩৬॥
ইতি শ্রীমন্মহাভারতে বিরাটপর্বণি পাণ্ডবপ্রবেশপর্বণি অষ্টমোঽধ্যায়ান্তর্গতং যুধিষ্ঠিরকৃতং শ্রীদুর্গাস্তবং সম্পূর্ণম্ ।
একইভাবে কুরুক্ষেত্রের মহারণে শ্রীকৃষ্ণের উপদেশে যুদ্ধজয়ের প্রার্থনা করে দেবী দুর্গার স্তুতি করেন অর্জুন।
নমস্তে সিদ্ধসেনানি ! আর্য্যে ! মন্দরবাসিনি !।
কুমারি ! কালি ! কাপালি ! কপিলে ! কৃষ্ণপিঙ্গলে !।।
ভদ্রকালি ! নমস্তভ্যং মহাকালি ! নমোহস্তু তে ।
চণ্ডি ! চণ্ডে ! নমস্তভ্যং তারিণি ! বরবর্ণিনী !।।
কাত্যায়নী! মহাভাগে ! করালি ! বিজয়ে ! জয়ে !।
শিখিপুচ্ছধ্বজধরে । নানাভরণভূষিতে !।।
অট্টশূলপ্রহরণে ! খড়্গখেটকধারিণি !।
গোপেন্দ্রস্যানুজে ! জ্যেষ্ঠে ! নন্দগোপকুলোদ্ভবে !।।
মহিষাসৃকপ্রিয়ে ! নিত্যং কৌশিকি ! পীতবাসিনী !।
অট্টহাসে ! কোকমুখি ! নমস্তেহস্তু রনপ্রিয়ে !।।
উমে ! শাকম্ভরি ! শ্বেতে ! কৃষ্ণে ! কৈটভনাশিনি !।
হিরণ্যাক্ষি ! বিরূপাক্ষি ! সুধুম্রাক্ষি ! নমোহস্তু তে !।।
বেদশ্রুতিমহাপুন্যে ! ব্রহ্মণ্যে ! জাতবেদসি !।
জম্বু- কটকচৈত্যেষু নিতং সন্নিহিতালয়ে !।।
ত্বং ব্রহ্মবিদ্যা বিদ্যানাং মহানিদ্রা চ দেহিনাম্ ।
স্কন্দমাতর্ভগবতি ! দুর্গে ! কান্তারবাসিনি !।।
স্বাহাকারঃ স্বধা চৈব কলা কাষ্ঠা সরস্বতী ।
সাবিত্রী বেদমাতা চ তথা বেদান্ত উচ্যসে ।।
স্তুতাসি ত্বং মহাদেবী ! বিশুদ্ধেনান্তরাত্মনা ।
জয়ো ভবতু মে নিত্যং ত্বৎপ্রসাদাদ্রণাজিরে ।।
কান্তারভয়দুর্গেষু ভক্তানামালয়েষু চ ।
নিত্যং বসসি পাতালে যুদ্ধে জয়সি দানবান্ ।।
ত্বং জম্ভনী মোহিনী চ মায়া হ্রীঃ শ্রীস্তথৈব চ ।
সন্ধ্যা প্রভাবতী চৈব সাবিত্রী জননী তথা ।।
তুষ্টি পুষ্টির্ধৃতির্দীপ্তিশ্চন্দ্রাদিত্যবিবর্ধিনী ।
ভূতির্ভূতিমতাং সংখ্যে বীক্ষ্যসে সিদ্ধচারণৈঃ ।।
এইভাবেই বেদ থেকে পুরাণ, স্মৃতি, তন্ত্র, মহাকাব্য ও বাংলার লৌকিক আঙিনা জুড়ে দুর্গামহিমার বিস্তৃতি। শরতের রোদের ঝলক দেখলেই মন আনচান করে ওঠে দুর্গার নানান আখ্যান, গল্প, গান, কবিতা শোনা বা পড়ার জন্য। সাধারণ মানুষ কিছুটা এভাবেই শারদোৎসব উদ্যাপন করেন। মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা এলে মন শিশুর মতো নেচেও ওঠে। আমাদের বছরভরের যা-কিছু সঞ্চয়, অপেক্ষা সব যেন এই কটা দিন ঘিরেই জমা হয়ে থাকে। তাই এই নিবন্ধের প্রয়াস। ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত বর্ণনার ইচ্ছা রইল। আসলে দেবী দুর্গাকে নিয়ে যত কিছুই লেখা হোক, তা কখনও শেষ করা যায় না, শাস্ত্রে তাই বলে—‘দুর্গামহিমা অপারং ন কিঞ্চিৎ!’