নেতাজীর ধর্মভাবনা
যে দেশনায়কের উপস্থিতিতে বর্তমান ভারতের অন্য রূপ আমরা দেখতে পারতাম, স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে যে মানুষটাকে হয়তো আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল, আজ তাঁর জন্মদিন। বহু আলোচনায় আজ বিবিধ মাধ্যম মুখরিত থাকবে তাঁর জয়ধ্বনিতে। অন্যদিকে, তাঁকে ঘিরে শ্লেষও উপচে পড়বে কোনও কোনও মাধ্যমে। তবে যাই হোক, আজ তাঁর দিন। ওড়িশার কটক শহরে জানকীনাথ বসু ও প্রভাবতী দেবীর ঘরে ১৮৯৭ সালে আজকের দিনেই তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাংলার যে দুই দেশনায়কের জন্য বাঙালি সবচেয়ে বেশি গর্বিত হতে পারে, তাঁদের দুজনের শেষ জীবনই রহস্যাচ্ছন্ন, এ অতি বেদনার বিষয়। প্রথমজন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, দ্বিতীয়জন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। একজন ভক্তিযোগের মধ্য দিয়ে দেশে শুদ্ধভক্তির হিল্লোল তুলেছিলেন, যে হিল্লোলে কেঁপে উঠেছিল সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতির সিংহাসন আর দ্বিতীয়জন কর্মযোগের মাধ্যমে যে বিশাল তরঙ্গ এনেছিলেন, তাতেও কেঁপে উঠেছিল অত্যাচারী সাম্রাজ্যবাদ। দুই দেশনায়কের মধ্যে মিল এই যে, তাঁরা দুজনেই অসাম্প্রদায়িক হিন্দু কিন্তু উগ্রবাদের চরম বিরোধী আবার দুজনেই সম্ভবত ক্ষমতার পদলেহনকারী স্বজাতি অথবা সাম্রাজ্যবাদী অথবা উগ্রবাদীর রোষের কারণ এবং তাঁদের নশ্বর দেহের চিহ্ন আর কখনও জনসমক্ষে আসেনি। এবং সম্ভাব্য আরও একটি মিল হল, দুজনেই পৌষসংক্রান্তির আশেপাশেই কোনও এক রাতে মহানিষ্ক্রমণের পথে বের হন। যাইহোক, কেমন ছিল নেতাজীর ধর্মচেতনা, সেই বিষয়েই আজ আমরা চেষ্টা করব আলোচনা করতে।
নেতাজীর ধর্মভাবনাকে বিশ্লেষণ করতে গেলে প্রথমেই উঠে আসবে স্বামী বিবেকানন্দের নাম। নেতাজীর যে কোনও জীবনীগ্রন্থ খুললেই আমরা দেখতে পাব তিনি বাল্যকালেই স্বামীজীর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে স্বামীজী যখন দেহত্যাগ করেন, তখন নেতাজীর বয়স মাত্র বছর পাঁচেক। বংশলতার দিক থেকেও নেতাজী অত্যন্ত শিক্ষিত পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন। তাঁর আত্মজীবনীতে তিনি দেখিয়েছেন তাঁর আদিপুরুষগণ কত সমৃদ্ধ ছিলেন। তাঁদের আদিবাসস্থান অর্থাৎ কোদালিয়া গ্রাম থেকে উঠে এসেছেন বহু স্বনামধন্য পণ্ডিত বা ব্রাহ্মধর্মের প্রচারক বা স্বাধীনতাসংগ্রামী। নেতাজীর বাবা শ্রদ্ধেয় জানকীনাথ বসু ছিলেন অত্যন্ত পণ্ডিত মানুষ, ওকালতি ছিল তাঁর পেশা। সরকারী উকিল ও পাবলিক প্রসিকিউটারের পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন এবং ‘রায়বাহাদুর’ উপাধি ত্যাগ করেছিলেন ব্রিটিশ সরকারের অত্যাচারের প্রতিবাদে। উদারমনা ও মুক্তহস্ত ছিলেন, গরীব ছাত্রদের পড়াশোনার ভার বহন করতেন, পৈতৃক গ্রামে দাতব্য চিকিৎসালয় ও লাইব্রেরি চালাতেন। স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে তাঁর সম্বন্ধ ছিল। জানকীনাথ মৃত্যুর আগে তাঁদের বাড়ির সমস্ত বৃদ্ধ ভৃত্য ও বাকি অনেকের অন্নসংস্থানের বন্দোবস্ত করে দিয়ে মানবধর্মের সমস্ত অঙ্গীকার পালন করে গিয়েছিলেন। নেতাজীর পিতামহের আগে অবধি বসু পরিবার ছিলেন শাক্তমতাবলম্বী, তার পর থেকে বৈষ্ণবমতে চলে আসেন এঁরা এবং উল্লেখযোগ্যভাবে জানকীনাথ উভয় মতেই দীক্ষিত ছিলেন। নেতাজীর মাতা প্রভাবতী দেবী হাটখোলার দত্ত পরিবারের মেয়ে, যে পরিবার আজও বনেদিয়ানায় ভাস্বর। যে হাটখোলা বাড়ির দুর্গাপূজার ভাসানের পর ‘বঙ্গ আমার জননী আমার, ধাত্রী আমার আমার দেশ’ গাইতে গাইতে ঘরে ফেরা হয় আজও। সুতরাং এ সকল কিছু বিশ্লেষণ করলেই আমরা দেখতে পাব, নেতাজীর মধ্যে একইসঙ্গে উদারতা, আধ্যাত্মিক-ধর্মীয় চেতনা ও দেশপ্রেমের উত্তরসূরিতা কীভাবে বাহিত হয়েছিল।
হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের বিষয়টি নেতাজী অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করেছেন। মুসলিম সাম্রাজ্যের অবসান ঘটিয়ে ব্রিটিশ শাসন কায়েম হয়েছিল বলে মুসলমানেরা ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ছিলেন অথবা, মুসলমান সাম্রাজ্যের মধ্যেই ভাঙন ধরেছিল বলেই ব্রিটিশের প্রবেশ হয়েছে, এ সকল তত্ত্বই নেতাজী একপাক্ষিক হিসেবে নাকচ করে দিয়েছেন। হিন্দু সহায়তা ছাড়া যেমন মুসলিম সাম্রাজ্য চলত না, তেমনই হিন্দু-মুসলিম এই যৌথ দেশীয় শক্তি ছাড়া ব্রিটিশ শাসনও চলত না, এই কথাটাই তিনি অকপটে জানিয়েছেন। নেতাজী মনে করিয়ে দিয়েছেন, পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজের সেনাপতি ছিলেন হিন্দু। আর ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের হোতা ছিলেন বাহাদুর শাহ। হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব যে একান্তই রাজনৈতিক প্রচারণা এবং একপাক্ষিক বিশ্লেষণের শিকার, সে কথা নেতাজী স্বীকার করে গিয়েছেন। আমরাও সেই প্রমাণ দেখি ইতিহাসে, মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় সিরাজ নবাবিয়ানা হারালেন, আবার পরবর্তীতে মীরকাশিম হয়ে উঠলেন ব্রিটিশবিরোধী, খুন করলেন ষড়যন্ত্রের আর এক কাণ্ডারী জগৎ শেঠকে। অন্যদিকে পলাশীর যুদ্ধে লর্ড ক্লাইভের জয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে লাটসাহেবের ফারসি অনুবাদক এবং কেরানি রাজা নবকৃষ্ণ দেব বাহাদুর উৎসব করতে চাইলেন। কিন্তু সিরাজ যে সব গির্জা ভেঙে দিয়েছেন, তাই নিজের বাসভবনেই ব্রিটিশ জয়ের আনন্দে আয়োজিত হল দুর্গাপূজা। লর্ড ক্লাইভ আমন্ত্রিত হয়ে বিস্তর পানভোজনের শেষে বাঈনাচ দেখে ফিরলেন। সুতরাং, নেতাজীর তত্ত্ব গ্রহণ করতে আমাদের বিন্দুমাত্র আপত্তি রইল না।
ব্রিটিশ রাজত্ব কায়েমের অব্যবহিত পরে বাংলার ধর্ম ও সাংস্কৃতিক সমাজে এক ভীষণরকম গোলযোগ দেখা গিয়েছিল। নেতাজীর লেখা থেকে আমরা তার কিছু আভাস পাই। উত্থান হয়েছিল ব্রাহ্মসমাজ এবং সমাজ-সংস্কারক রামমোহন রায়ের, এঁরা হিন্দুধর্মের সার গ্রহণ করে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সেরাটুকু নিয়ে আমাদের প্রাচীন সংস্কৃতিকে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন যাতে পাশ্চাত্যের সঙ্গে টক্কর দেওয়া যায়। একদল গোঁড়া হিন্দু তখন হিন্দুধর্মের সবকিছুই সঠিক, এই মতকে প্রতিষ্ঠিত করছিলেন, খ্রিস্টধর্মের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এঁদের ভূমিকা ছিল। আবার অন্যদিকে উঠে এসেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো প্রগতিপন্থী, যাঁরা নিজের হিন্দুত্বকে অস্বীকার না করেই তাঁকে সংস্কার করতে চেয়েছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস, স্বামী বিবেকানন্দও একই পন্থার মানুষ হিসেবে বিশ্বাস করতেন নেতাজী, যাঁরা পাশ্চাত্যকেও অস্বীকার করেননি। এই আধ্যাত্মিক আন্দোলনের ধারা বহন করেছিলেন ঋষি অরবিন্দ। আবার ঋষি অরবিন্দ রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ালে এই রাজনৈতিক-আধ্যাত্মিক মিলন এগিয়ে নিয়ে যান বাল গঙ্গাধর তিলক ও মহাত্মা গান্ধী। এই রাজনৈতিক জাগরণ বা সচেতনতা অনেক পরে এসেছে বলেই জানিয়েছেন নেতাজী। যে কারণে তাঁর পিতা সরকারী চাকরী করতেন, সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র ‘বন্দেমাতরম্’ লিখেও সরকারী চাকরী করতেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় দেশভক্তির চেতনাসম্পন্ন গান রচনা করেও ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সারাজীবন হিন্দু পণ্ডিতের জীবন যাপন করেও সমাজ সংস্কার করে গেছেন, কেশবচন্দ্র সেন সমাজ সংস্কারে ব্রতী ছিলেন, এঁরা কেউই তখনও ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে ছিলেন না। তাই বিপ্লব বা আন্দোলন, ধর্ম নয়, রাজনৈতিক চেতনার উপরই অধিক নির্ভর করে। কেশবচন্দ্র সেনের শিষ্য বেণীমাধব দাস ছিলেন নেতাজীর অন্যতম প্রিয় শিক্ষক। নানান অনুষঙ্গে থেকেও নেতাজী নিজের হিন্দুত্বকে সাদরে স্বীকার করেছেন, তাঁর যথেষ্ট আধ্যাত্মিক চেতনা ছিল, তিনি সংস্কারের পক্ষপাতীও ছিলেন, ধর্ম-নির্বিশেষে তিনি উগ্রতার বিরুদ্ধেও ছিলেন, অন্যদিকে ব্রিটিশবিরোধীও ছিলেন। হিন্দু বা মুসলিম, তিনি কোনও সাম্প্রদায়িক সংগঠনকে স্বীকৃতি দেননি আবার আজাদ হিন্দ ফৌজে জ্বলজল করছে কর্নেল মহম্মদ জামান কিয়ানি-র নাম। নানান মতভেদ সত্ত্বেও মহাত্মা গান্ধীকে তিনিই ‘জাতির জনক’ বলে ভূষিত করেন জাতির কাছে। আবার তিনি প্রকৃতি-প্রেমিক। নারীসঙ্গ কম কিন্তু নারীশক্তিতে বিশ্বাসী, তাই আজাদ হিন্দ বাহিনীর নারীবাহিনীতে জ্বলজ্বল করে হিন্দু, মুসলিম, শিখ নারীদের নাম। এই বিরল চরিত্রই তাঁকে অনন্য করে তুলেছে। কারণ নেতাজী বিশ্বাস করতেন সকল কিছুর ঊর্ধ্বে রয়েছে নৈতিক মূল্যবোধ, যা থেকে বিচ্যুত হলে বাকি কোনও কিছুরই মূল্য থাকে না।
আলোচনার শুরুতেই বলেছিলাম, স্বামীজীর প্রভাব নেতাজীর উপর বিস্তার লাভ করেছিল। এক আত্মীয়ের কাছে স্বামীজীর বইগুলো পেয়ে তিনি পড়া শুরু করেন স্কুলজীবনেই। পনেরো বছর বয়সে তিনি স্বামীজীকেই নিজের জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। স্বামীজীর কর্মযোগ, বেদান্তের দৃষ্টি, উপনিষদের সার, তাঁকে গভীরভাবে আকর্ষিত করেছিল। সকল প্রবন্ধকারই স্বামীজী সম্পর্কে নেতাজী কী বলেছেন, উদ্ধৃতি সহযোগেই আলোচনা করেন। আমি তা করব না। কারণ, নেতাজীর জীবনে শ্রীরামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দের যে প্রভাব পড়েছিল, তা কেবল উদ্ধৃতি দিয়ে বোঝানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। শ্রীরামকৃষ্ণের কামিনীকাঞ্চন ত্যাগের কথা হৃদয়ে রেখে নেতাজী বয়ঃসন্ধিকালে নিজের সঙ্গে লড়াই করেছেন। চরম বাধ্য সন্তান আদর্শের প্রতি নিষ্ঠার কারণে জাতিভেদ প্রভৃতী নানা বিষয়ে বাবা-মার অবাধ্য হয়েছেন। নানান বই পড়ে যোগাভ্যাস করেছেন এবং সিদ্ধিলাভ না করলেও মানসিক শান্তি পেয়েছেন। আবার তীর্থে তীর্থে ঘুরে বেরিয়েছেন গুরুর সন্ধানে। নানান সাধুসঙ্গ করেছেন। কোনও কোনও সাধুর উপদেশও মানতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু আবার ফিরে এসেছেন শ্রীরামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ ভাবাশ্রয়ে। স্বামীজীর বাণীতে উদ্বুদ্ধ দেশের জন্য প্রথম পল্লিসংস্কারে ব্রতী হয়েছিলেন, এবং বুঝেছিলেন, ‘আত্মনো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ’ শ্লোকাংশের সারমর্ম। তিনি সমস্তরকমের কুসংস্কার ও গোঁড়ামিমুক্ত ধর্মের ভাব চেয়েছিলেন। স্বামীজীর বৈদান্তিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে যে সামান্য বৈজ্ঞানিক দৃষ্টির মিল আছে, তা-ই তাঁকে আকৃষ্ট করেছিল। তিনি গৃহত্যাগী সন্ন্যাসীদের মানতেন, বিশেষত যাঁরা কোনও সম্প্রদায়ের সঙ্গে জড়িয়ে নেই। যে-কারণে তাঁর মা-বাবার গুরুদেব তাঁকে ধর্মীয়ভাবনায় সহায়তা করলেও তিনি তাঁকে গুরু মানতে পারেননি। আবার পরবর্তীতে যখন তাঁর মনে সংশয় এসেছে, এই ব্রহ্মচর্য একজন দেশসেবকের জন্য কতটা জরুরি, তখনও তিনি আক্ষেপ করেননি, বরং মনে করেছেন তাঁর অল্প বয়সের ঐ কৃচ্ছ্রসাধনের ফলেই তিনি জীবনের অনেক দুঃখ-বাধাকে অতিক্রম করতে পেরেছিলেন। জীবনের এক পর্যায়ে রাজনৈতিক সচেতনতার আঙিনায় এসে তিনি ধর্মকে জাতীয়তাবাদের সঙ্গে মেলানোর প্রচেষ্টাও করেছিলেন, যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জনসেবা। শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে দেশগঠন করা। এর পরেই তিনি শ্রীঅরবিন্দের দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। বহু মানুষের সংস্পর্শে এলেও শ্রীঅরবিন্দ তাঁর কাছে রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার মানুষ ছিলেন। শ্রীঅরবিন্দ যেভাবে বিভিন্ন যোগর মাধ্যমে পরমসত্যের উল্লেখ করেছেন, তা নেতাজীর যাবতীয় সংশয় দূর করে দিয়েছিল, মুক্তির আশ্বাস পেয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে, বারাণসীতে শ্রীরামকৃষ্ণের মানসপুত্র স্বামী ব্রহ্মানন্দের সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয়েছিল তাঁর। বৃন্দাবনে থাকাকালীন এক বৈষ্ণব সাধুর মুখে আচার্য শংকরের মতবাদের নিন্দা শুনে মন খারাপ হয়েছিল তাঁর। তিনি ‘নহি নিন্দা ন্যায়’ অর্থাৎ, ‘আমার ইষ্টই শ্রেষ্ঠ, বাকি সব তাঁর অনুগত’ এই তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন না বলেই বোধ হয়। আচার্য শংকরের মায়াবাদকে তিনি যুগোপযোগী হিসেবে মানতে পারেননি কিন্তু অস্বীকারও করেননি। ব্রিটিশ অত্যাচার-কে যদি তিনি মায়া বলে ধরে নিতেন, তবে কি তিনি ‘নেতাজী’ হতেন? আবার বিলেতে থাকার সময় নেতাজীই এক পাদ্রীর ধর্মপ্রসঙ্গে শংকরের মায়াবাদ নিয়ে আলোচনা করে এসেছেন। কলেরা-বসন্তের রুগীর শুশ্রুষা, সৎকার ইত্যাদিকে মায়া বলে এড়ানো তাঁর পক্ষে কঠিন ছিল। তাঁর ধর্মভাবনা নিয়ে আরো বহুতর বিশ্লেষণের আঙ্গিক আছে, পরে নিশ্চয়ই সে সুযোগ আবার হবে।
যাহোক, পরমজ্ঞানের প্রতি নেতাজীর আজীবন অন্বেষণ অটুট ছিল, এ-কথা স্বীকার করে নেওয়াই যায়। সনাতন আদর্শকে হৃদয়ে লালন করেছিলেন বলেই হয়তো আজ তাঁর কর্মযোগ আমাদের কাছে শাশ্বত, সনাতন। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের জন্মদিনে জানাই অনন্ত শ্রদ্ধা।
তথ্যঋণ:
৩. https://ritambangla.com/opinion/swami-vivekananda-and-netaji-subhashchandra/