পুরাতন ভৃত্য (প্যারডী)

 পুরাতন ভৃত্য (প্যারডী)

[কবিগুরুর চরণে সহস্র সহস্র ক্ষমা প্রার্থনা ক’রে এই লালিকা বা প্যারডী প্রস্তুত করা গেল। আমার বিশ্বাস, গুরুদেব অপরাধ নেবেন না, তাঁর সাধের বাংলাদেশটি ছারেখারে যায় দেখে তিনি তাঁর এক অতি দুর্বল উত্তরসূরি বাঙালী কবির এহেন ধৃষ্টতা মার্জনা করবেন।

বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ – উপস্থিত পদ্যটি নিছকই এক কল্পনাভিত্তিক রম্যরচনা। এতে বর্ণিত বিভিন্ন চরিত্র, সংস্থা, নাম, কিংবা বিষয়বস্তুর সঙ্গে বাস্তবের কোনো সম্পর্ক নেই। কেউ যদি এর সঙ্গে কোনো বাস্তব চরিত্র, সংস্থা, নাম, অথবা ঘটনাবলির মিল খুঁজে পান, তবে সে মিল সম্পূর্ণরূপে কাকতালীয় বা সমাপতন ব’লে গণ্য হবে।]

মোষের মতন চেহারা যেমন, পাষণ্ড অতি ঘোর।

কয়লা-পাথর-গরু চুরি যায়, কেষ্টা ব্যাটাই চোর।

শাসকদলের ডাকাবুকো ‘নেতা’, সমন তোলে না কানে।

বোমা-গুলি লাগে পুলিশেরও গায়, তবু না চেতন মানে।

গরু চুরি গেলে ডাকে সিবিয়াই, চীৎকার করি “কেষ্টা!”

যত করে তাড়া, নাহি পায় সাড়া, খুঁজে ফেরে সারা দেশটা।

দশটা সমনে একখানা রাখে, বাকি কোথা নাহি জানে –

সমন পেলেই এসেস্কেএমে জাল চিঠি ক’রে আনে।

যেখানে সেখানে দিবসে দুপুরে চড়াম চড়াম সাধা;

মহাকলরবে গালি দেয় সবে “পাজি গরুচোর গাধা!”

আজি এ প্রভাতে সিবিয়াই বুঝি শুঁটিয়ে করিবে লাল,

ছিল সুখে, আহা! সোনা গো আমার, কে করিল হেন হাল!

বাড়ি ব’য়ে এসে গ্রেপ্তার করে, ভেঙে দেয় যত তালা,

পেয়াদার দল কেষ্টারে দেয় নকুলদানার ডালা।

দরজার পাশে দাঁড়িয়ে কে হাসে? পাব্লিক নাকি? শালা –

পাচন খেয়েছে এতদিন, এবে মেটাবে মনের জ্বালা।

গুড়ের বাতাসা দিয়ে হনু যারে রেখেছিল সন্ত্রাসে,

তাহারা আজিকে শমনের সম অট্ট অট্ট হাসে!

অপার হইয়া ব’সে আছে জেলে আরেকটি মোটাপার্থ –

কুড়িটি টাকাও না পারে লুকাতে, এমনি সে অপদার্থ!

চাকরি-ভোট আর মায়ের আঁচল-সিঁদুর লুঠেছে ঠেসে,

লুঠ খেয়ে ফুলে-ফেঁপে ওঠা ভুঁড়ি গিয়েছে আজিকে ফেঁসে।  

এতেক দেখিয়া ভাইপোটি-কাঁখে পিসীর জ্বলিছে পিত্ত!

তবু মায়া তার ত্যাগ করা ভার – বড়ো পুরাতন ভৃত্য।

Durga Prasad Pahadi

Durgaprasad Pahadi is a Bengali poet and cultural commentator.

0 Reviews

Related post